মৃত্তিকার ভৌত ধর্ম
- Get link
- X
- Other Apps
মৃত্তিকার ভৌত ধর্ম
মৃত্তিকার গ্রথন (Soil texture) ঃ
মৃত্তিকার প্রাকৃতিক ধর্মগুলির মধ্যে মৃত্তিকার গ্ৰথন বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। গ্ৰথন বলতে মৃত্তিকায় উপস্থিত বিভিন্ন আকৃতির খনিজ কণাগুলির আপেক্ষিক অনুপাতকে বােঝায়, যা মৃত্তিকার সূক্ষতা ও স্থূলতা নির্দেশ করে। মৃত্তিকার গ্ৰথন হল একটি নির্দিষ্ট মৃত্তিকায় বালুকা, পলি ও কমের আপেক্ষিক অনুপাত। মৃত্তিকার গ্ৰথন মৃত্তিকায় সংঘটিত ভৌত ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতিকে প্রভাবিত করে। মৃত্তিকার কণাগুলিকে আকৃতি অনুসারে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
(i) বৃহদাকার নুড়ি (Gravel) ঃ যে সমস্ত কণার ব্যাস প্রায় 2-75 মি. মি., তাদের নুড়ি বলা হয়। আবারকোনও কোন ক্ষেত্রে কণাগুলির ব্যাস 75 - 250 মি. মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের বলা হয় প্রস্তর খণ্ড (Stone)। এই বৃহদাকার নুড়িখণ্ডগুলির জলধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম।
(ii) বালুকণা বা (Sand) ঃ এদের আকৃতি সাধারণ গােলাকার হয়, এদের ব্যাস প্রায় 0.05 - 2 মি. মি.।এদের জলধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম কিন্তু এদের মধ্যে আঠালােভাব একেবারেই না থাকায় বায়ুচলাচলের পথ সুগম।
(iii) পলিকণা বা সিস্টকণা (Silt) : পলিকণাগুলি প্রকৃতিগত ভাবে মসৃণ, অনেকটা পাউডারের মত। এদের ব্যাস প্রায় 0.002 - (0.05 মি. মি.। ভেজা অবথায় সামান্য আঠালো এবং চটচটে। পলিকণার জলধারণ ক্ষমতা মধ্যম। এই ধরনের প্রকৃতির জন্য পলিযুক্ত মৃত্তিকা উদ্ভিদ বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক।
(iv) কর্দম বা ক্লেকণা (Clay) কর্মকণার আয়তন সর্বাপেক্ষা বেশী। সেইজন্য এই মৃত্তিকাকণাগুলি যথেষ্ট পরিমাণ জলধারণ করতে পারে এবং পুষ্টি মৌল ধারণ করতে পারে। এই কণাগুলি মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
মৃত্তিকার বর্ণ ও তাপমাত্রা:
মৃত্তিকার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌতধর্ম হল মৃত্তিকার বর্ণ। এটি প্রধানত মৃত্তিকায় উপস্থিত জৈব পদার্থের পরিমাণ, জল নির্গমন, বায়ু চলাচল – এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভরশীল। আবার যে জলবায়ুতে কোন মৃত্তিকা গঠিত হয়, সেই জলবায়ুর প্রকৃতিও মৃত্তিকাটির বর্ণ দ্বারা নির্দেশিত হয়। সাধারণভাবে খনিজ প্রধান মৃত্তিকা হাল্কা ধূসর বর্ণের হয়ে থাক; জৈব পদার্থের উপস্থিত মৃত্তিকাকে গাঢ় ধূসর বা গাঢ় বাদামী বর্ণের করে তােলে;জল নির্গমন উত্তম হলে এবং মৃত্তিকার তাপমাত্রা, আর্দ্রতা বায়ু চলাচল রাসায়নিক বিক্রিয়ার পক্ষে উপযােগী হলে লৌহ জারিত ও জলযুক্ত হয়ে অক্সাইডে পরিণত হয় যা মৃত্তিকাকে হলুদ বর্ণের করে তােলে। আবার জলবিহীনলৌহ অক্সাইডের উপস্থিতিতে মৃত্তিকা লাল বর্ণযুক্ত হয়ে থাকে। কখন কখন লৌহ বিজারিত হলে মৃত্তিকার বর্ণ নীলাভ-সবুজ হয়। মৃত্তিকায় কোয়ার্জ ও ফেলষ্পরের প্রাধান্য থাকলে মৃত্তিকা যথাক্রমে সাদা ও লাল বর্ণযুক্ত হয়ে থাকে। মৃত্তিকার বর্ণের সাথে উর্বরতার একটি সম্পর্ক আছে, যা নিম্নে প্রকাশ করা হল-
কালােবাদামি>মরিচাবাদামী>লাল>ধূসর>হলুদ>সাদা
উর্বর→অনুর্বর
সাধারণত গাঢ় বর্ণের মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ অধিক পরিমাণে উপস্থিত থাকে বলে তা উর্বর প্রকৃতির হয়েৎথাকে। হাল্কা বর্ণের মৃত্তিকাতে কোয়ার্জ কণার আধিক্য থাকায় এরূপ মৃত্তিকায় অনুখাদ্যের পরিমাণ খুব কম থাকে।মৃত্তিকার তাপমাত্রা মৃত্তিকার আর্দ্রতা, জৈবিক কার্যাবলী ইত্যাদি বিষয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং পরােক্ষ ভাবে বায়ু চলাচলকে প্রভাবিত করে। যেমন— তাপমাত্রা জলের বাষ্পীভবনে সাহায্য করে এবং এই বাম্প মৃত্তিকার অভ্যন্তর থেকে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবার গথে মৃত্তিকার অভ্যন্তরে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে যা মৃত্তিকার গঠনের উপর বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
মৃত্তিকা বায়ু (Soil atmosphere) ঃ
মৃত্তিকার বায়ু যা প্রধানত অক্সিজেন (O,), কার্বন ডাই-অক্সাইড (C),) ও নাইট্রোজেন (N,) নিয়ে গঠিত,মৃত্তিকার উর্বরতা নির্ধারণে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করে। মৃত্তিকা বায়ুতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বায়ুমণ্ডলের তুলনায় বেশী এবং অক্সিজেনের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু উভয় পরিবেশে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং অক্সিজেনের মােট পরিমাণ সমান। মৃত্তিকায় কার্বন ডাই-অঙ্গাইডের পরিমাণ (5,1% – 5% হয় এবং মৃত্তিকার পৃষ্ঠস্তরে অক্সিজেনের পরিমাণ 18% – 20%। মূলের বৃদ্ধি, অঙ্কুরােদগম এবং অনুজীবগুলির জীবন ধারণের ক্ষেত্রে মৃওিকা বায়ুতে উপস্থিত অক্সিজেন-এর পরিমাণ যথেষ্ট গুরুত্বপুর্ণ। মৃত্তিকা বায়ুর পরিমাণ কমলে মূলরােমের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। জল ও অনুখাদ্যের শােষণ যথেষ্ট কমে যায়।
মৃত্তিকা জল (Soil Water) :
বৃষ্টিপাতের বিন্দু অংশ অনুস্রবণের (Percolation) মাধ্যমে মৃত্তিকায় প্রবেশ করে মৃত্তিকা জাল সৃষ্টি করে।কোন একটি মৃত্তিকায় জলের পরিমাণ মৃত্তিকার গ্ৰথন ও গঠনের উপরে নির্ভরশীল। বালুকাপ্রধান মৃত্তিকা শূন্যস্থানগুলি বৃহদাকৃতির হওয়ায়, এই মৃত্তিকা জল ধরে রাখতে পারে না, তাই একে ভৌতিক শুল্ক মৃত্তিকা(Physically dry soil) বলে। আবার জলবদ্ধ অবস্থায় মৃত্তিকা জলে লবণের আধিক্য থাকায় জল যথেষ্ট পরিমাণে উপস্থিত থাকলেও তা উদ্ভিদের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়তা করে না, তাই একে শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মৃত্তিকা (Physiologically dry soil) বলে। কর্দম প্রধান মৃত্তিকার তুলনামূলক ভাবে জলধারণ ক্ষমতা অনেক বেশী। তবে দোঁয়াশ (loamy) জাতীয় মৃত্তিকায় বালুকণা ও কর্দমকণার পরিমাণ প্রায় সমান হওয়ায় খুব বেশী জল মৃত্তিকায় জমতে পারে না। তাই দোঁয়াশ মৃত্তিকা উদ্ভিজ বৃদ্ধির পক্ষে সর্বাপেক্ষা অনুকুল।
সচ্ছিদ্রতা (Porosity):
সছিদ্র মৃত্তিকা অর্থাৎ যে সমস্ত মৃত্তিকায় শূন্যস্থানের পরিমাণ বেশী সেই সব মৃত্তিকায় বায়ুচলাচলের পথ সুগম।কিন্তু মৃত্তিকায় শূন্যস্থানের পরিমাণ কম হলে বায়ুর পরিমাণ কম হয়। ফলে এরুপ মৃত্তিকায় বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম হয়। মৃত্তিকার সচ্ছিদ্রতা নির্ভর করে এথন, গঠন, জৈব পদার্থের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়গুলির উপর।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment