জীববৈচিত্র্য

জীববৈচিত্র্য কাকে বলে? এর গুরুত্ব সংক্ষেপে আলােচনা করাে। 

কোনো বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ, প্রানী ও অণুজীব প্রভৃতির সংখ্যা, বৈচিত্র্য এবং পরিবর্তনশীলতাকে জীববৈচিত্র্য বলে। বিজ্ঞানী ম্যাকেঞ্জি ও সহকর্মীদের মতে (Mackenzie et.al, 1999) বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন স্তরের জীবের ক্ষেত্রে একই প্রজাতির জিনগত প্রকরণ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির বৈচিত্র সমুহকে একত্রে জীববৈচিত্র্য বলে।

বিজ্ঞানী W. G. Rosen 1985 খ্রিস্টাব্দে প্রথম “biodiversity” (জীববৈচিত্র) শব্দটি প্রবর্তন করেন।


জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব:

মানুষের জীবনে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সমগ্র মনুষ্য প্রজাতির অস্তিত্ব জীববৈচিত্র্যের বিভিন্ন উপাদানের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে নির্ভর করে। নীচে জীববৈচিত্র্যের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল-

(i) খাদ্যের উৎস হিসেবে সবুজ উদ্ভিদ ও তাদের উন্নত প্রজাতিসমূহপ্রজাতিসমূহ : 

সবুজ উদ্ভিদ বাস্তুতন্ত্রে উৎপাদকের ভূমিকা পালন করে। খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্রের প্রতিটি জীব।উৎপাদকের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে পুষ্টি পদার্থ সংগ্রহ করে। বর্তমানে উদ্ভিদের চাষযােগ্য মােট প্রজাতির সংখ্যা প্রায় 2500, আমরা এদের থেকে খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও নানারকম প্রসাধন সামগ্রী ও ওষুধ সংগ্রহ করি। বর্তমান পৃথিবীতে কৃষিকার্য ও খাদ্য উৎপাদন উচ্চ ফলনশীল উদ্ভিদ প্রজাতির চাষের ওপর নির্ভরশীল।

(ii) ড্রাগ ও ওষুধের উৎস হিসেবে 

মানুষ রােগ নিরাময় এবং স্বাস্থ্যরক্ষায় জীব বৈচিত্র্যের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করে। ভেষজ উদ্ভিদ থেকে বিভিন্ন প্রকার আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুত হয়। মরফিন, কুইনাইন, ট্যাক্সল (Taxus উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত ক্যানসার বিরােধী পদার্থ) প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ড্রাগ আমরা উদ্ভিদ থেকে পাই।

(iii) জিন ভাণ্ডার হিসেবে:

জীববৈচিত্র্য ও বিভিন্ন রকম জীব আসলে নানা রকম জিন সম্ভারের পরিচায়ক। জীবের মধ্যে রক্ষিত এই জিন সম্ভার মানুষের কাছে অমূল্য সম্পদ। মানুষ নানাভাবে এই জিন সম্ভারকে কাজে লাগাতে শিখেছে। মানুষ দুই প্রজাতির উদ্ভিদ কিংবা প্রাণীর মিলন ঘটিয়ে সংকর উদ্ভিদ বা প্রাণী সৃষ্টি করে।এইভাবে মানুষ অধিক উৎপাদনশীল জীব তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। এক জীব থেকে পছন্দসই জিন আহরণ করে অন্য জীবে প্রবেশ করিয়ে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ বা প্রাণী তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে।

(iv) প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় জীববৈচিত্র্য:

একটি বাস্তুতন্ত্রে জীবসম্প্রদায় পরস্পরনির্ভরশীল হয়ে বসবাস করে। এদের মধ্যে উৎপাদক, বিভিন্ন শ্রেণির খাদক ও বিয়ােজক রয়েছে। বাস্তুতন্ত্রের যে-কোনাে একটি উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার অর্থ হল সেই উদ্ভিদ বা প্রাণীর সঙ্গে সম্পর্কিত খাদ্যশৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটা এবং এর ফলে অন্যান্য নির্ভরশীল প্রজাতিগুলির সংকট দেখা দেয়।

(v) অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

জীববৈচিত্র্য ও জীববৈচিত্র্য প্রত্যেক দেশের মূল্যবান সম্পদ ও সমৃদ্ধির পরিচায়ক। বিভিন্ন ধরনের প্রাণী বিদেশে রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয়। জীবাণুদের কাজে লাগিয়ে নানা শিল্প গড়ে উঠেছে। Thermus aquaticus নামক জীবাণুর উৎসেচক কাজে লাগিয়ে PCR পদ্ধতিতে নিজের প্রয়ােজন মতাে DNA উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। বাদুড়ের ইকোলােকেশন কৌশলকে কাজে লাগিয়ে রাডার যন্ত্র তৈরি করা গেছে।

(vi)  পর্যটন এর উন্নয়ন:

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জায়গাগুলি যথা—চিড়িয়াখানা, অভয়ারণ্য, মিউজিয়াম, বােটানিক্যাল গার্ডেন প্রভৃতি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। 

(vii) পরিবেশ রক্ষায় জীববৈচিত্র্য:

পরিবেশে বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ পরিবেশগত অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। পরিবেশকে শীতল রাখা ও বৃষ্টিপাত ঘটানাের মূলে অবদান সম্পর্কে কোনাে সন্দেহ থাকে না। এই কারণে গাছপালা কেটে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। 

(viii) কৃষ্টিগত গুরুত্ব:

জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানুষের মনকে আনন্দে ভরিয়ে তােলে। আমাদের সাহিত্যে, কাব্যে, কবিতায় অরণ্য ও বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর সুন্দর বর্ণনা দেখতে পাই। মানুষের সঙ্গে অরণ্য ও বন্যপ্রাণীর একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। জীববৈচিত্র্য থেকেই মানুষ সৌন্দর্যবর্ধক বস্তু, সঙ্গী প্রাণী, আসবাবপত্র নির্মাণের কাঠ, পশুর, অস্থি ইত্যাদি সংগ্রহ করে।

(ix) মূল্যবোধ:  

জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই 1992 খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনিরাে শহরে প্রথম বসুন্ধরা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সম্মেলনে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গৃহীত হয়








Comments

Popular posts from this blog

কৃষিক্ষেত্রে শৈবালের ভূমিকা