সবজি চাষের রােগ সমস্যা
সবজি চাষের রােগ সমস্যা
কৃষি নির্ভর দেশ গুলির অর্থনীতি তে সবজি চাষ এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। সবজি চাষের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। এর প্রধান সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম হল এর রােগ সমস্যা। রােগ’ বলতে বৃহদর্থে স্বাভাবিক বৃদ্ধির যেকোন রকম বিচ্যুতি বা বিকৃতিকেই বােঝায়। প্রকৃতপক্ষে কোন ক্ষতিকারক অণুজীব দ্বারা আক্রান্ত হলে তাকে রােগ’ বলা উচিত আর অণুখাদ্য বা অন্য কোন প্রয়ােজনীয় পদার্থের অভাব বা আধিক্য হেতু যে বিচ্যুতি বা বিকৃতি হয় তাকে শারীরবৃত্তীয় বিকৃতি বলা উচিত। যাই হােক, প্রচলিত ভাবে উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির বিচ্যুতিকেই রােগ ধরা হয়।বিভিন্ন কারণে সবজির বিভিন্ন রকম রােগ হতে দেখা যায়। যেমন, বিভিন্ন খাদ্যের (অণুখাদ্য সহ) অভাব ও আধিক্য জনিত রােগ ছত্রাক,ভাইরাস,জীবাণু, নিমাটোড নামক কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ফলে সৃষ্ট রােগ ইত্যাদি। একই রােগজীবাণু (জীবাণু, ছত্রাক, ভাইরাস ইত্যাদি) দ্বারা একাধিক রকমের সবজি আক্রান্ত হতে পারে। একই জমিতে বার বার একই সবজি চাষ করার ফলে এবং যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে সবজি চাষের ক্ষেতে রােগ এক বিরাট সমস্যার আকারে দেখা দিয়েছে। রােগ লক্ষণ দেখে সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। সবজির প্রধান প্রধান রােগ লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্বন্ধে সম্যক ধারণা অত্যন্ত আবশ্যিক
১) চারা ঢলেপড়া রােগ (Damping off)
ছত্রাকঘটিত এই রােগটি দ্বারা প্রায় সব সবজিই আক্রান্ত হয়। চারা মাটির উপরে বের হওয়ার আগে অথবা পরে এই রােগ হতে পারে। চারা বের হওয়ার আগে হলে চাষী ভাবে তার বীজের অঙ্কুরােদগম ক্ষমতা কম, কিন্তু যথাসময়ে ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে মাটির উপরে বেড়ে ওঠা চারাতেও রােগ সংক্রমন ঘটে। আক্রান্ত চারার কান্ডে, মাটির ঠিক উপরের অংশে জলবসা দাগ দেখা যায় এবং আক্রান্ত চারা ঢলে পড়ে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, মেঘলা আবহাওয়া ও গুমােট গরমে এই রােগ বেশী ছড়ায়। ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ ও বীজতলা শােধন এবং বীজতলার চারায় ওষুধ স্প্রে করে এই রােগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
২) পাতায় দাগ রােগ (Leaf spot)
ছত্রাকঘটিত এই রােগটি প্রায় সবরকম সবজিতেই হতে দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পাতায় বাদামী বর্ণের গােলগােল ছােট বড় দাগ দেখা যায়। তানেক সময়, দাগের কেন্দ্রীয় অঞ্চল পুড়ে গেছে বলে মনে হয় ও ফুটো হয়ে যায়। আক্রান্ত গাছে ৭-১০ দিন অন্তর ৩-৪ বার কারবেন্ডাজিম জাতীয় ওষুধ প্রতিলিটার জলে ১ গ্রাম হিসাবে স্প্রে করা উচিত।
৩) ঢলে পড়া বা ঝিমাননা রােগ (Wilt)
জীবাণু ও ছত্রাক উভয়ের আক্রমনেই ঢলে পড়া বা ঝিমানাে রোগ হতে পারে। প্রধানতঃ টমেটো, আলু, বেগুন, লঙ্কা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি সবজিতে এই রােগ হতে দেখা যায়। জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত গাছ অতি দ্রুত ঢলে পড়ে। আক্রান্ত গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়,পাতা বিবর্ণ দেখায়, কান্ডের ভিতরের অংশ বাদামী বর্ণ ধারণ করে এবং ২-৩ দিনের মধ্যেই গাছ ঝিমিয়ে পড়ে মরে যায়। জীবাণু নাশক যেমন প্ল্যানটোমাইসিন ইত্যাদি দিয়ে বীজশােধন করে এবং ৩-৫ বছরের শস্য পর্যায় অবলম্বন করে এই রােগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। ছত্রাক ঘটিত ঢলে পড়া রােগে আক্রান্ত গাছ ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়তে থাকে। নিচের দিকের পাতা প্রথমে আক্রান্ত হয় এবং ক্রমশঃ উপরের পাতা আক্রান্ত হয়ে থাকে। আক্রান্ত গাছের কান্ডের ভিতরের অংশ ঘন বাদামী বা কালচে রং এর হয়, পাতা পােড়াপােড়া দেখায়। ম্যানকোজেব (২.৫ গ্রাম/লি) ও কারবেন্ডাজিম (১গ্রাম/লি) জাতীয় ওষুধ পর্যায়ক্রমে ৭ দিন অন্তর ৩-৪ বার স্প্রে করে ভালাে ফল পাওয়া যায়।
৪) কলার রট রােগ (Collar rot)
মাটি বাহিত ছত্রাকঘটিত রােগটি টমেটো, বেগুন, লঙ্কা, কপি প্রভৃতি বিভিন্ন সবজিতে হতে দেখা যায়। মাটি সংলগ্ন কান্ড আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত স্থানে জল বসা দাগ ধরে, ছাল বা বাকল পচে যায় ও গাছ মরে যায়। মাটির সংস্পর্শে এলে ফল আক্রান্ত হয়ে পচে যায়।প্রতি কেজি বীজে ৪ গ্রাম হারে ট্রাইকোডারমা ভিরিডি নামক ছত্রাকঘটিত ওষুধ দ্বারা শােধন করে ও চারা অবস্থা থেকে নিয়মিত কারবেন্ডাজিম জাতীয় ওষুধ স্প্রে করে ভালাে ফল পাওয়া যায়। আক্রান্ত জমিতে ৩-৫ বছর ঐ জাতীয় সবজি চাষ না করা উচিত।
৫) ধ্বসা রােগ (Blight)
দুই ধরণের ধ্বসা রােগ হতে দেখা যায় জলদি ধ্বসা ও নাবী ধ্বসা। ছত্রাকঘটিত রােগ দুটি প্রধানতঃ আলু, টমেটো, বেগুন, লঙ্কা ইত্যাদি সবজিতে হতে দেখা যায়। জলদি ধ্বসার আক্রমন প্রথম দেখা যায় পাতায়, শেষের দিকে ফলেও আক্রমন ঘটতে পারে। আক্রান্ত পাতায় হালকা বাদামী বর্ণের ছিট ছিট দাগ দেখা যায়, দাগের মধ্যে বলয় দাগ (ring) দেখা যায়। একাধিক দাগ মিশে গিয়ে বড় বড় ধ্বসা ধরা দাগ হতে পারে। আক্রান্ত ফলের ত্বকে অনুরূপ দাগ হয়। নাবী ধ্বসা আক্রান্ত পাতায় কিনারা সংলগ্ন বড় বড় অনিয়মিত বাদামী দাগ দেখা যায়। ক্রমে দাগ বড় হতে থাকে ও ঘনবাদামী থেকে কালচে রং ধারণ করে ও পােড়া পােড়া দেখায়। আক্রান্ত গাছ কমজোরী হয়ে পড়ে, আক্রান্ত ফল পচে যায়। মেঘলা আবহাওয়াতে এই রােগ বেশী হয়। ম্যানকোজেব, ক্যাপটান বা জিনেব জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করে।এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৬) অ্যানথ্রাকনােজ রােগ (Anthracnose)
বেগুন, লঙ্কা, ক্যাপসিকাম, টমেটো, কুমড়াে জাতীয় সবজি ইত্যাদির এটি একটি ভয়ঙ্কর রােগ। ছত্রাকঘটিত এই রােগটির আক্রমনে ফলন প্রচন্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কচিপাতা, মুকুল, কুঁড়ি, ফুল ও ফল আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত গাছের কচিপাতা, কুঁড়ি, ফুল ও অপরিণত ফল ঝরে পড়ে, মুকুল শুকিয়ে যায়, আক্রান্ত গাছগুলিকে ঝাটার মতাে দেখায়, কাঁচাফলের গায়ে জলবসা গােল গােল বা লম্বাটে দাগ দেখা যায়, ক্রমে ঐ অংশ পচে যায়, বিবর্ণ দেখায় ও ফল ঝরে পড়ে অথবা পচে যায়। কুমড়াে জাতীয় সবজির পাতায় ত্রিকোনাকার বাদামীবর্ণের দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা অতিদ্রুত পচে যায় ও ফলে পচন ধরে। কারবেন্ডাজিম ও ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক আক্রান্ত গাছে প্রথম থেকে স্প্রে করতে পারলে সুফল পাওয়া যায়।
৭)জীবাণুঘটিত ক্যাংকার রােগ (Bacterial canker)
বেগুন, টমেটো লঙ্কা ইত্যাদি সবজি এই রােগের দ্বারা অধিক আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত গাছের পাতা বৃত্ত থেকে একদিকে আক্রান্ত হয় অথচ অন্য দিকে ভালাে থাকে। কাঁচাফলের গায়ে জলবসা দাগ দেখা যায়, কান্ড ফেটে যায়, দাগের চারিদিকে ধূসর সাদা দাগ (halo) দেখা যায়, কান্ড লম্বালম্বি কাটা হলে ক্রীম সাদা, হলুদ বা বাদামী দাগ দেখা যায়। বীজ, ফেলে রাখা ফসলের অংশ, মাটি ইত্যাদি দ্বারা এই রােগ সংক্রমিত হয়। নীরােগ ফল থেকে বীজ সংগ্রহ, বীজ ও বীজতলা শােধন, ৩-৫ বছরের শস্য পর্যায়,পরিচ্ছন্ন চাষ ইত্যাদির উপর জোর দেওয়া উচিত।
৮) সাদাগুঁড়াে রােগ (Powdery mildew)
কুমড়াে জাতীয় এবং ডাল জাতীয় সবজিতে ছত্রাকঘটিত এই রােগটি বেশী হতে দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পাতার উপরে, কান্ডে ও ফলের গায়ে সাদা পাউডারের মতাে ছােট বড়ড়া দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায়, কান্ড শুকিয়ে যায়, ফল ছােট হয়ে যায় ও ফলন প্রচন্ড ভাবে কমে যায়। সালফার (২গ্রাম/লি), ট্রাইডেম(১ মিলি/লি), ডিনােক্যাপ (১মিলি/লি) বা করবেন্ডাজিম (১গ্রাম/লি) স্প্রে করে এই রােগ নিয়ষ্ণ করা সম্ভব। মেঘলা ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এই রােগ বেশী হতে পারে।
৯) ডাউনি মিলডিউ রােগ (Downy mildew)
ছত্রাকঘটিত রােগটি কুমড়াে জাতীয় ও শিম্বগােত্রীয় সবজিতে বেশী হতে দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পাতার নীচের দিকে ত্রিকোনাকার হলুদাভ দাগ দেখা যায়। ভেজা ও মেঘলা আবহাওয়ায় দ্রুত রােগ ছড়ায়, আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে যায়। ক্রমে পুরাে গাছ শুকিয়ে যায়। জিনেব, মেটালাক্সিল, ক্লোরােথাননালিন বা ম্যানকোজেব ৭ দিন অন্তর ৩-৪ বার স্প্রে করে ভালাে ফল পাওয়া যায়।
১০) ফোমােপসিস ফলপচা রােগ (Phomopsis)
প্রধানতঃ বেগুন গাছ এই রােগটি দ্বারা বেশী আক্রান্ত হয়। ছত্রাক ঘটিত রােগটি বীজ ও মাটি বাহিত হয়ে ফসলের ক্ষতিসাধন করে। বীজতলায় আক্রান্ত চারা দূর্বল হয়ে ঢলে পড়ে, ছােট অবস্থায় আক্রান্ত গাছের পাতা মাটির সংস্পর্শে এলে গােলাকার ঘন বাদামী বর্ণের দাগ হতে দেখা যায়। দাগের মাঝখানে হালকা রং ধরে। ক্রমে, পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে। আক্রান্ত ফলের গায়ে প্রথমে জলবসা দাগ দেখা যায়, পরে ঐ অংশ এবং ক্রমশঃ পুরাে ফলটি পচে যায়। পরিচ্ছন্ন চাষ, শস্য পর্যায়, বীজ ও বীজতলা শোধন, বড় গাছে ইফোলাটিন, ক্যাপটান বা ম্যানকোজেব প্রে ইত্যাদির মাধ্যমে এই রােগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
১১) সাহেব লােগ (Mosale)
ভাইরাস ঘটিত রােগটি টমেটো, বেগুন, লঙ্কা, ভেণ্ডিসহ কুমড়াে জাতীয় সবজিতে ব্যাপকভাবে হতে দেখা যায়। ক্ষেত্র বিশেষে সাদা মাছি ও জাবপােকা এই রোগ ছড়ায়। আক্রান্ত গাছের পাতায় হলুদ-সবুজ নক্সা দেখা যায়, গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়, ফুল ও ফল হয় না। রােগাক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে, পুড়িয়ে বা পুতে ফেলা, সাদামাছি বা জাবপােকা (বাহক) মারার জন্য সর্বাঙ্গবাহী কীটনাশক যেমন, মনােক্ৰটোফস্ বা ম্যালাথিয়ন জাতীয় ওষুধ প্রয়ােগ করা ইত্যাদির মাধ্যমে রােগের প্রকোপ কমানাে যায়।
১২) পাতা কোঁকড়ানাে রােগ (Leaf curl)
ভাইরাসঘটিত রােগটি বেগুনজাতীয়, ডালজাতীয়, কুমড়ােজাতীয় প্রায় সবরকম সবজিতেই হতে দেখা যায়। সাদামাছি, জাবপােকা ইত্যাদি এই রােগটি ছড়ায়। আক্রান্ত গাছের পাতা কুঁকড়ে যায়, গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়, ফুল ও ফল ধরে না। সাহেব রােগের ক্ষেত্রে উল্লেখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে রােগ কম হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
১৩) তুলসী বা কুটে রােগ (Nematode & Mycoplasma)
নিমাটোড নামক মাটির কৃমি অথবা মাইকোপ্লাজমা নামক অণুজীবের আক্রমনে বেগুন,টমেটো, লঙ্কা ইত্যাদি সবজিতে এই রােগটি হতে দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পাতা ছােট ছােট হয়ে যায়, তুলসী পাতার মতাে দেখায়, গাছ বেঁটে হয়ে যায়, ফুল ও ফল ধরে না। নিমাটোডের আক্রমনে শিকড়েফোলা ফোলা গাঁট দেখা যায় কিন্তু মাইকোপ্লাজমার আক্রমনে শিকড়ে ঐ ধরণের ফোলা অংশ দেখা যায় না। ৩-৫ বছরের শস্য পর্যায়, দানা কীটনাশক প্রয়ােগ করে চারা রােপন, পর্যায়ক্রমে গাঁদাফুলের চাষ, গ্রীষ্মকালে ফঁকাজমি চষে রাখা, মিথাইল ডেমিটন (২ মিলি/লি) জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করা ইত্যাদির মাধ্যমে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
১৪) কালােশিরা বা একপেশে রােগ (Black leg)
জীবাণু ঘটিত রােগটি বাঁধাকপি ও ফুলকপিতে দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পাতার কিনারা হলুদ হয়ে যায়, শিরা-উপশিরা ও গাছের কান্ড প্রথমে ঘনবাদামী ও পরে কালচে রং ধরে ও পচে যায়। কান্ড থেকে সংক্রমন মূলে পৌঁছলে মূলে ঘনবাদামী পচন ঘটে এবং পাতার গােড়ার দিক থেকে পচন শুরু হয়। গরম জলে বীজ শােধন (৫২° সেলসিয়াস), পরিচ্ছন্ন চাষ,শস্য পর্যায়, সঠিক দূরত্বে চারা লাগানাে ইত্যাদির মাধ্যমে রােগের প্রকোপ কমানাে সম্ভব।
১৫) কালােপচা রােগ (Black Rot).
বাঁধাকপি এই রােগটি দ্বারা বেশী আক্রান্ত হয়। জীবাণুর আক্রমনে পাতার কিনারা বরাবর জলবসা দাগ দেখা যায়। ক্রমে দাগ পাতার মাঝের দিকে প্রসারিত হতে থাকে এবং ইংরাজী 'V' আকৃতির হলুদাভ, বিবর্ণ, শুকনাে দাগ দেখা দেয়। পাতার শিরা-উপশিরা বাদামী বা কালচে রং ধারণ করে এবং অপরিণত পাতা ঝরে যায়। বাঁধাকপি ও ফুলকপির ‘মাথা’ বিবর্ণ হয়ে যায়।একপেশে রােগের মতােই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে এই রােগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
১৬) ফলপচা রােগ
ছত্রাকঘটিত এই রােগটির দ্বারা কুমড়াে জাতীয় সবজি অধিক আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত অংশে সাদা বা ধূসর রং এর তুলাের মতাে উদ্ভেদ দেখা যায়। প্রাথমিক ভাবে আক্রান্ত ফলের ত্বকে ঘন সবুজ, জলবসা, নরম নরম দাগ দেখা যায়। ক্রমশঃ পচন ধরে ও উপরােক্ত লক্ষণ প্রকাশ পায়। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ফল মাটির সংস্পর্শে না আসে এবং নিয়মিত ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
১৭) শেকড়পচা রােগ
বিন, বরবটি সহ বিভিন্ন সবজির শিকড় একাধিক ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পচে যায়। প্রথমে শাখা-প্রশাখা এবং ক্রমে প্রধান মূল আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত অঞ্চল জলবসা ও নরম হয় এবং পরে ধূসর, হলুদাভ বা বেগুনী হয়ে পচে যায়। গাছ কমজোরী হয়ে যায়, সংলগ্ন কান্ডে পচন ঘটে এবং অবশেষে গাছ মরে যায়। বীজশােধন, নিকাশীযুক্ত উঁচু জমিতে চাষ করা, ৩-৪ বছরের শস্য পর্যায় অনুসরণ করা, সুষম মাত্রায় সার প্রয়ােগ এবং কপার অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাকনাশক গােলা জলে (৪ গ্রাম/লি) গাছের গােড়া ভিজিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এই রােগের প্রকোপ কমানাে যায়।
১৮) ক্লাব রুটরােগ (Club root)
বাঁধাকপি, ফুলকপি, ইত্যাদি সবজি এই রােগটি দ্বারা অধিক আক্রান্ত হতে দেখা যায়। বেশী রকম রােগ সংক্রমনের পরই রােগ লক্ষণ প্রকাশ পায়। আক্রান্ত শিকড় ফুলে ওঠে, গাছ বেঁটে হয়ে যায়, মাথার সাইজ ছােট ও বিবর্ণ হয়ে যায়। পরিচ্ছন্ন চাষ, ৮-১০ বছরের শস্য পর্যায়, বীজ শােধন, ০.২% বেনােমিল দ্রবনে ১৫-২০ মিনিট চারার শেকড় ডুবিয়ে রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে রােগ প্রতিরােধ করা যায়।
Comments
Post a Comment