ব্যাকটেরিয়া কোশের গঠন
ব্যাকটেরিয়া কোশের গঠন
ব্যাকটেরিয়া হল এককোশী প্রােক্যারিওটিক জীব। এদের কোশ গােলাকার (কক্কাস),দণ্ডাকার (ব্যাসিলাস), সর্পিলাকার (স্পাইরিলাম) এবং কমা আকৃতির (কোমা) হয়। বাইরের আকৃতি নানাধরনের হলেও এদের কোশের গঠন মােটামুটি একই রকমের হয়। কোশ নিম্ন লিখিত অংশ নিয়ে তৈরি হয়ঃ
(১) কোষপ্রাচীর
ব্যাকটেরিয়া কোশের বাইরে একটি দৃঢ় কোশপ্রাচীর থাকে। এটি পুরু হয়। এতে তিনটি স্তর থাকে। একেবারে বাইরের স্তরটি লিপােপলিস্যাকারাইড দিয়ে তৈরি।মাঝখানের স্তরটি মিউকোপলিস্যাকারাইড দিয়ে তৈরি। একেবারে ভিতরকার স্তরটি পেপটাইডােগ্লাইক্যান দিয়ে তৈরি। গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়াতে ভিতরের স্তরটি সবচাইতে পুরু হয় আর বাকি দুটি স্তর পাতলা হয়। গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াতে তিনটি স্তরই সমান পুরু হয়। ভিতরকার স্তরটিতে অ্যাসিটাইলগুকোসামাইন এবং অ্যাসিটাইল মুরামিকঅ্যাসিড এই দুরকমের অ্যামিনােসুগার থাকে। পেপটাইডেঅ্যালানিন, গ্লুটামিকঅ্যাসিড, ডাই অ্যামিনাে পিমেলিক অ্যাসিড এবং গ্লাইসিন থাকে।
(২) কর্ষিকা
সচল ব্যাকটেরিয়ার কোশপ্রাচীরের সঙ্গে সুতাের মতাে কর্ষিকা যুক্ত থাকে।এগুলি লম্বায় 4-5 mm হয়। এর তিনটি অংশ। তলার মূল অংশ কোশপ্রাচীরের ভিতরে থাকে,মাঝখানের দণ্ডের মতাে অংশও কোশপ্রাচীরের ভিতরে থাকে, বাইরের সুতাের মতাে অংশ কোশপ্রাচীরের বাইরে থাকে। সুততার মতাে অংশের ভিতরটায় দণ্ডাকার ফ্ল্যাজেলিন প্রােটিন এবং বাইরে আবরণী থাকে।
(৩) পিলি
ব্যাকটেরিয়ার গায়ে অসংখ্য সরু ছােটো পেরেমেতে অংশ যুক্ত থাকে,এদের পিলি বা ফিম্ব্রি বলে।এরা পিলিন প্রােটিন দিয়ে তৈরি। এদের গায়ে অ্যান্টিজেন থাকে।ওই অ্যান্টিজেন দিয়ে এরা বিপরীত যৌনের ব্যাকটেরিয়াকে শনাক্ত করতে পারে, তাই এদের যৌনপিলি বলে।
(৪) সাইটোপ্লাজমীয় আবরণী
কোশপ্রাচীরের ভিতরে প্রােটিন-লিপিড-প্রেটিন দিয়ে তৈরি সজীব আবরণী থাকে।এই আবরণীতে সন উৎসেচক থাকে। মাঝেমাঝে এইআবরণী আঙুলের ভিতরদিকে ভাঁজ হয়ে যে অঙ্গ তৈরি করে তাকে পট্ট বা ল্যামেলা বলে। এই ল্যামেলা বিচ্ছিন্ন হয়ে সাইটোপ্লাজমে ছড়িয়ে পড়ে। সালােকসংশ্লেষী ব্যাকটেরিয়াতে এর ভিতরে ব্যাকটিরিও ক্লোরোফিল থাকে, তাই এরে থাইলাকয়েড বলে।সাইটোপ্লাজমীয় আবরণী অনেক সময় অনেকগুলি ভাঁজ যুক্ত হয়ে যে অ তৈরি করে তাকে মেসােজোম বলে।এতে শ্বসন উৎসেক থাকে।
(৫) সাইটোপ্লাজম
কোষপর্দার ভিতরে স্বচ্ছ জেলির মতাে দানাদার ধাত্রকে সাইটোপ্লাজম বলে। এতে গহ্বর, ভলিউটিনদানা, লাইপােপ্রােটিন, স্নেহ বস্তু, ভিটামিন, রাইবােজোম দানা, RNA এবং একটি দ্বিতন্ত্র চক্রাকার DNA থাকে।
(৬) নিউক্লয়য়েড
সাইটোপ্লাজমে একটি ক্রাকার দ্বিতন্ত্র DNA এথাকেহারদুটি প্রান্ত পরস্পর জুড়ে থাকে। এটি অনেকগুলি ভাঁজ যুক্ত হয়। প্রতিটি ভাঁজ পরস্পর RNA এবং প্রােটিন দিয়ে যুক্ত থাকে। এই DNA কে নিউক্লীয়য়েভ বা জেনােফোর বলে কারণ এটি ব্যাকটেরিয়ার বংশগত বৈশিষ্ট নিয়ন্ত্রণ করে।
(৭) প্লাজমিড ও এপিজোম
নিউক্লীয়ওয়েড ছাড়া ব্যাকটেরিয়া কোশে যে আনুষঙ্গিক DNA থাকে তাকে প্লাজমিড বলে। এরা ব্যাকটেরিয়া কে নানা কাজে সাহায্য করে। যে প্লাজমিড বংশগত DNA এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অপত্যে সঞ্চারিত হয় তাকে এপিজোম বলে।
Comments
Post a Comment