ব্যাকটেরিয়ার অর্থনৈতিক গুরুত্ব।
ব্যাকটেরিয়ার অর্থনৈতিক গুরুত্ব।
জীব জগতে ব্যাকটেরিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। এরা যেমন মানুষের কল্যাণ সাধনে ব্যবহৃত হয় আবার তেমনি মানুষের, উদ্ভিদের এবং অন্যান্য প্রাণীর বিভিন্ন রােগ সৃষ্টি করে ক্ষতিসাধন করে। বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে, বিভিন্ন শিল্পে ও বিশেষত ঔষধশিল্পে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার ব্যাপক।
(a) কৃষিকার্যে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার
(i) অনেক ব্যাকটেরিয়া বাতাসের নাইট্রোজেনকে সংবন্ধন করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এদের নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী ব্যাকটেরিয়া বলে। এরা দুরকমের হয়। যথা – মিথােজীবী (Symbiotic) ও স্বাধীনজীবী (Non-symbiotic)। মিথােজীবী ব্যাকটেরিয়া শিম্বগােত্রীয় উদ্ভিদের মূলে অর্বুদ সৃষ্টি করে বসবাস করে। যেমন-মটরের মূলে Rhizobium leguminosarum, বিনের মূলে Rhizobium phaseoli, সয়াবিনের মূলে Bradurhizobium japonicum ইত্যাদি। এসব ব্যাকটেরিয়া সরাসরি বাতাসের নাইট্রোজেন সংবন করে মাটিতে মিশিয়ে দেয়। ফলে মাটির উর্শগতা বৃদ্ধি পায়। ফল চাষের আগে তাই এই শিম্বীগোত্রীয় উদ্ভিদের চাষ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া স্বাধীনজীবি ব্যাকটেরিয়া Azotobacter chroococcum, Azomonas azilis, Xanthibacter autotrophicus, Xanthobacter autotrophicus, Azospirillum lipoferum প্রভৃতি মাটিতে মিশিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা যায়। কারণ এরাও বাতাসের নাইট্রোজেন সরাসরি সংবন্ধন করতে পারে।
(ii) Bacillus subtilis, Bacillus ramosus প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া মৃত প্রাণী এবং উদ্ভিদের উপর কাজ করে তাদের দেহের প্রোটিন অ্যামোনিয়াম পরিণত করে। অ্যামোনিয়াম যৌগকে জারিত করে নাইট্রাইটে পরিণত করে এবং Nitrobacter নাইট্রাইটকে জারিত করে নাইট্রেটে পরিণত করে। ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
(iii) Clostritium butyricum ব্যাকটেরিয়া পাট গাছ পচিয়ে পাট তন্তু নিষ্কাশনে সাহায্য করে।
(iv) Thiobacillus thioparus ব্যাকটেরিয়া হাইড্রোজেন সালফাইড ভেঙে সালফেট তৈরি করে এবং উদ্ভিদ তা গ্রহণ করে।
(v) Bacillus thuringiensis ব্যাকটেরিয়া ফসলের ক্ষতিকর পতঙ্গের লার্ভাগুলিকে ধংস করে। এভাবে জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ফসলের ক্ষতি রােধ করা যায়।
(b) শিল্পে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার (Use of Bacterla in Industry)
ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে আকাঙ্ক্ষিত পণ্য বা দ্রব্য উৎপাদন করা সম্ভব। এই উদ্দেশ্যে ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে জৈব অ্যাসিড, অ্যামিনাে অ্যাসিড, উৎসেচক, ঔষধ, অ্যালকোহল ইত্যাদি উৎপাদন করা যায়।
(i) দই উৎপাদন(Curd Production)
Lactobacillus lacti, Streptococcus lactis ব্যাকটেরিয়ার মিশ্রণ দুধে মিশিয়ে 40°C তাপমাত্রায় দুধ থেকে দই প্রস্তুত করা যায়। এছাড়া পনির, ছানা, মাখন প্রভৃতিও এই ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে প্রস্তুত করা যায়।
(ii) চমশিল্পে (Leather Industry)
চর্ম শিল্পে চামড়া টান অর্থাৎ কাঁচা চামড়া পাকা করবার জন্য ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়। Bacillus lichenifornis ব্যাকটেরিয়ার প্রােটিয়েজ উৎসেচক চামড়া ট্যান করতে ব্যবহার করা হয়।
(iii) অ্যালকোহল প্রতুত (Alcohol production)
অতি প্রাচীন কাল থেকেই সন্ধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যালকোহল প্রস্তুত করা হয়ে আসছে। Clostridium acctobustylicum ব্যাকটেরিয়া বিউটাইল অ্যালকোহল ও অ্যাসিটোন উৎপাদন করে। এছাড়া Saccharomyces cerevistae মাইক্রোব বা অণুজীব ব্যবহার করে বিয়ার (Beer) প্রস্তুত করা হয়। Saccliaronyces ellipsode ব্যবহার করে আঙুরের শর্করাকে সন্ধান করিয়ে ওয়াইন (Wing) প্রস্তুত করা হয়। কৃষি আবর্তানা থেকে ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে ইথানল উৎপাদন একটি প্রচলিত পদ্ধতি। ব্রাজিলে প্রচুর পরিমাণ ইথানল উৎপাদন হয়। আমেরিকাতে গ্যাসােলিনের সঙ্গে 9:1 অনুপাতে ইথানল মিশিয়ে গ্যাসােহোল (Gasohol) উৎপাদন করা হয় এবং যানবাহনের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। Zymomonas mobilis ব্যাকটেরিয়া কার্বোহাইড্রেটকে সন্ধান করে ইস্টের থােক দ্রুত ও দ্বিগুণ অ্যালকোহল উৎপাদন করে। Thermoanaerobacter acete ব্যাকটেরিয়া ও অ্যালকোহল প্রস্তুত করে।
সন্ধান প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যায়ে Clotridium sp সেলুলােজকে শর্করাতে পরিণত করে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে Zymomonus ও Thermoanaerobacter শর্করাকে ইথানলে পরিণত করে।
(iv) ভিনিগার প্রস্তুতে (Vinegar Production)- Acetobacter aceti, Mycoderma aceti প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া শর্করা জাতীয় দ্রবণে কোহল সন্ধান ঘটিয়ে ভিনিগার প্রস্তুতে সাহায্য করে।
(v) কাগজ প্রস্তুত (Paper Manufacture)
Bacillus subtillis ব্যাকটেরিয়া নিঃসৃত উৎসেচক অ্যামাইলেজ কাগজ শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
(vi) চা শিল্পে (Tea Industry)
Bacillus megatherium ব্যাকটেরিয়া চা শিল্পে সুগন্ধীকরণে ব্যবহৃত হয়। এটি তামাক পাতার রং ও গন্ধের উৎকর্ষ সাধনেও ব্যবহৃত হয়।
(vii) জৈব অ্যাসিড প্রস্তুত:
ব্যাকটেরিয়া গুড়, চিনি প্রভৃতির থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিড প্রস্তুত করে। ল্যাকটিক অ্যাসিড চমশিল্পে ও বয়ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
(vill) ওষুধ শিল্পে (Pharmaceutical)
ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন রকম জীবনদায়ী ওষুধ প্রস্তুত করা হয়। যেমন - বীজঘ্ন, স্টেরয়েড, ভিটামিন এবং ভ্যাকসিন।
(1) বীজগ্ন (Antibiotics)
Streptomyces griseus থেকে স্ট্রেপটোমাইসিন বীজগ্ন প্রস্তুত করা হয়। এটি যক্ষ্মা ও প্লেগ রােগের ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। Streptomyces venezuelae থেকে ক্লোরামফেনিকল বীজঘ্ন প্রস্তুত করা হয়। এটি অনেক গ্রাম পজিটিভ ও গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়। নীচে কয়েকটি বীজগ্ন ও তাদের প্রস্তুতকারক ব্যাকটেরিয়ার তালিকা দেওয়া হল।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রস্তুতকারক ব্যাকটেরিয়া
(i) অ্যামফোটেরিসিন- Streptomyces nodosus
(ii) ব্যাসিট্রাসিন-Bacillus licheniformis
(iii) কার্বোমাইসিন-Streptomyces halstedii
(iv) ক্লোরােটেট্রাসাইক্লিন- Streptomyces aureofaciens
(v) এরিথ্রোমাইসিন- Streptomyces erythreus
(vi) নিওমাইসিন-Streptomyces fradiae
(vii) নিস্টাটিন- Streptomyces noursei
(viii)পলিমিক্সিন-B-Bacillus polymyxa
(ii) ভিটামিন সংশ্লেষ (Vitamin Synthesis)
ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনেক ভিটামিন প্রস্তুত করা যায়। স্ট্রেপ্টোমাইসিন অ্যান্টিবায়ােটিক প্রস্তুত করবার সময় উপজাত হিসাবে ভিটামিন উৎপন্ন হয়। এছাড়া ভিটামিন ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে সরাসরি
প্রস্তুত করা যায়।
নীচে কয়েকটি ভিটামিন ও তাদের প্রস্তুতকারক ব্যাকটেরিয়ার নাম দেওয়া হল -
(i) রাইবােফ্লাবিনপ্রস্তুতকারক ব্যাকটেরিয়া- Ashyba gossypi
(ii) L- সরবােজ- Gluconobacter oxidans
(iii) 5-কিটোগ্লুকোনিক অ্যাসিড-Gluconobacter oxidans
(iv) Vitamin B12- Propionibacterium shermanii
Comments
Post a Comment